,

গোপালগঞ্জে জাল দাখিলায় ‘জমি রেজিস্ট্রি’; জড়িতরা অধরা

জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে হাল সনের জাল দাখিলা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ উঠেছে একটি জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে। সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে এ জাল জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

সাব রেজিস্ট্রার অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারী ও দলিল লেখকের যোগসাজসে ওই জাল জালিয়াতি চক্র এ জন্য দায়ী বলে অভিযোগে জানা যায়।

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করলেও অবশেষে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। কিন্তু জাল জালিয়াতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অপরাধীরা।

গোপালগঞ্জ সদরের ঘোষেরচর গ্রামের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মো. তানজুল ইসলাম মোল্যা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি বিশ্বস্ত একটি সূত্রে খবর পাই গত ৩১ জুলাই বিআরএস ১০৬ নং ঘোষেরচর মৌজার বিআরএস ৭২২নং খতিয়ানের একটি জমি হাল সনের জাল দাখিলা দিয়ে দলিল (নং-৬৫৩৯/২২) রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। এরপর ওইদিনই আমি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে বিআরএস খতিয়ান ও খাজনার রশিদের সঠিকতা যাচাইয়ে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করি। এরপর সাব-রেজিস্ট্রার হাল সালের ওই দাখিলার সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট একটি আবেদন করি।

গোপালগঞ্জ পৌর তহশীল অফিসের পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এস এম সাফিজুর রহমান বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় হতে প্রাপ্ত পত্রে সংযুক্ত দাখিলার ফটোকপি, অফিসের রেকর্ডপত্র ও অনলাইনে রেজিস্ট্রার সমূহ যাচাই করেছি। দাখিলাটি সঠিক নয়। অনলাইন এবং অফলাইন দাখিলায় একটি কিউআর কোড থাকে। যা কিউআর কোড রিডার অথবা এ›ড্রয়েড ফোনের কিউআর এ্যাপ দ্বারা দাখিলার কিউআর কোড যাচাই করা সম্ভব। উক্ত দাখিলার ফটোকপির কিউআর কোড যাচাই করলে দেখা যায়, দাখিলাটি জাল। মূলত কম্পিউটারে অন্য একটি দাখিলা এডিট করে এ জাল দাখিলা সৃজন করা হয়েছে। জাল দাখিলা সৃজনকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন তিনি।

সিন্ডিকেটের মূলহোতারা হলেন, ঘোষেরচর উত্তরপাড়ার তিন ভাই অরবিন্দু বাইন, সন্তোষ বাইন ও সত্যেন বাইন। এরা ঘোষেরচর উত্তরপাড়ার পরিস্কার বাইনের ছেলে।

গোপালগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মামুন খান, ১০৬ নং ঘোষের চর মৌজার ৭২২ নং খতিয়ানের ৫২৯৯ দাগের বিআরএস ও খাজনা রশিদের সঠিকতা যাচাইয়ের প্রতিবেদনে দাখিলাটি জাল ও এডিট করে সৃজন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। একই সাথে উক্ত দাখিলার মাধ্যমে যাতে কোন দাখিল সম্পাদন না হয়, এমনকি অতীতে কোন দলিল সম্পাদিত হয়ে থাকলে তা বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর সাব রেজিস্ট্রারকে অনুরোধ করেন।

গোপালগঞ্জ সদরের সাব রেজিস্ট্রার আনোয়ারুল হাসান বলেন, দলিল সম্পাদনের পূর্বে লেখকরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে রেজিস্ট্রি জন্য আমার কাছে পাঠান। কাজের চাপ থাকায় অনেক সময় সব কিছু সঠিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয় না। ৬৫৩/২২ নম্বরের দলিলটি লেখক ইলিয়াছ উদ্দিন উপস্থাপন করেছেন। দাখিলটি জাল প্রমাণিত হওয়ায় তাকে কারণ দর্শানো হয়। এছাড়া দলিল বাতিলে আমার কোন হাত নেই। এটি আদালতের এখতিয়ার।

প্রসঙ্গত, এই জাল জালিয়াতি চক্রটি এরআগেও এ ধরণের কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চক্রের মূলহোতারা তাদের আপন বড় ভাই পুলিন চন্দ্র বাইনের কাছ থেকে ৫ শতাংশ জমি লিখে নেওয়ার কথা বলে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় পৌনে ৬ বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। ঘটনা জানার পর পুলিন চন্দ্র হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।

এই বিভাগের আরও খবর